মায়ের কোল থেকে প্রবাস—ভালোবাসার দূরত্ব নয়


 দূরদেশে বসে যখন রাতের আকাশ দেখি, তখন মনে হয়... এই আকাশের নিচেই তো আছেন মা-বাবা। অথচ আমি কত দূরে! একটা ফোনের ওপারে, কিন্তু স্পর্শের বাইরে। গলা শুকিয়ে আসে যখন “মা কী খেয়েছো?” জিজ্ঞেস করি... মা হাসি দিয়ে বলে, “তোর পছন্দের ভর্তা বানাইছিলাম, খাইছিস না থাক, তোর জন্য রাখছি।” কিন্তু জানি, আমি খেতে আসবো না — শুধু মা অপেক্ষা করবে।


বাবা হয়তো চুপচাপ থাকেন। ফোনে বেশি কিছু বলেন না। কিন্তু তাঁর কণ্ঠে লুকানো ক্লান্তি আমি শুনতে পাই… যেই বাবা একদিন ছায়া হয়ে পাশে ছিলেন, আজ তাঁকে আমি সাহারা দিতে পারি না।


আমি এখানে দিনের পর দিন কাজ করি শুধু এই দু’জন মানুষকে ভালো রাখার আশায়। অথচ মাঝে মাঝে মনে হয়, টাকা পাঠাই ঠিকই… কিন্তু মায়ের কোলে মাথা রাখা বা বাবার সঙ্গে চুপচাপ হাঁটার যে শান্তি, সেটা কোনো রেমিট্যান্সে মেলে না।


রাতের খাবার একা খেতে বসলে মনে পড়ে, মা কখনো খালি প্লেটে ভাত তুলে দিতেন না। আর এখন? গ্লাসে পানি পর্যন্ত নিজেই ঢেলে নিতে হয়। বাবা যখন শরীর খারাপের কথা গোপন করেন, তখন বুকের ভেতর হাহাকার করে। কতবার বলেছি, “বাবা, কষ্ট লুকায়ো না…” কিন্তু তিনি শুধু বলেন, “তুই ভালো থাক, আমি ঠিক আছি।”


তাদের ভালোবাসা সমুদ্রের মতো… আর আমি যেন স্রোতের উল্টো দিকে ছুটে চলা একটা নৌকা। যত দূরেই যাই না কেন, মনে হয়, আমার শুরুটাও ওখানেই, শেষটাও সেখানেই।


প্রবাসে থেকেও মা-বাবা আমার পৃথিবীর একমাত্র আপন আশ্রয়। টাকা দিয়ে তাঁদের সুখ কিনতে পারবো না… কিন্তু এই ভালোবাসাটা? এটা কোনো দূরত্বেই ফিকে হয় না। এটা নিঃশ্বাসের মতো… থেকে যায়… সবসময়… নিঃশব্দে… গভীরভাবে।

লেখক :- মোহাম্মদ মামুনুল ইসলাম চৌধুরী 

সৌদি আরব প্রবাসী 

Comments

Popular posts from this blog

প্রবাসীর জীবনে বাস্তব কিছু কথা…

একটা সাদা ফুলের গল্প

একবার যে পুরুষটা বাড়ি ছাড়ে, তার আর ফিরে আসা হয় না...