মাকে সময় দাও, টাকায় সব ফিরবে না
ছেলেটা এখন বিদেশে।
দীর্ঘ ছয় বছর ধরে প্রবাসে কাটছে তার জীবন-একাকীত্ব, কঠিন পরিশ্রম আর হাজারো না বলা অভিমানে ঘেরা।
তার মা... এখনো সেই পুরনো গ্রামে, মাটির ঘরে। প্রতিদিন বিকেলে উঠোনে বসে থাকেন-চোখ রেখে দেন সেই পথটার দিকে, যে পথ ধরে তার ছেলে একদিন ঢাকা গিয়েছিল, তারপর দেশ ছেড়ে বহু দূরে চলে গিয়েছিল-"ভালো জীবনের" খোঁজে।
মা প্রতিদিন দুপুরে রান্না করে ছেলের প্রিয় খাবার।
ভাত, আলু ভর্তা আর পান্তা। গামলাটা ছেলের জন্য তুলে রাখেন, মনে করেন, "আজকে না হয় ফোন করবে, বলবে- মা, খাইছি না রে আজ..."
কিন্তু ফোন আসে না।
ফোন আসে কেবল মাস শেষে, কোনো ATM থেকে টাকা তোলার মেসেজ, বা ছোট ভাইয়ের ফোনে-"ভাইয়া টাকাটা পাঠাইছো?"
ছেলেটাও কাঁদে-প্রতিদিন কাজ শেষে, রুমের কোণে বসে মায়ের ছবি দেখে। মনে পড়ে যায়-শৈশবে মা কিভাবে ভিজে গামছা দিয়ে তার গা মুছিয়ে দিতেন, যখন সে খেলতে খেলতে ঘেমে যেত। মনে পড়ে সেই রাতে মা না খেয়ে শুয়েছিলেন, যেদিন ঘরে খাবার ছিল না।
আর আজ?
আজ মা একা খায়, একা ঘুমায়, একা উঠোন ঝাড়ে, আর রাত নামলে ছেলের খালি গামলাটার পাশে বসে বলে
"তুই খেয়ে নিস তো রে বাবা?"
এই গল্পটা কোনো এক ছেলের না... এই গল্পটা আমাদের সবার। যাদের মা ঘরে থাকে, কিন্তু আমরা 'সময়' খুঁজে পাই না। যাদের মা এখনও প্রিয় খাবার তুলে রাখে, আর আমরা খাই হোটেলের ঠান্ডা রুটি।
একদিন হয়তো মা থাকবে না। তখন সেই খালি গামলাটা, সেই চুপচাপ উঠোনটা, সেই মায়ের হাতের ডাকা 'বাবা' শব্দটা... সব কাঁদাবে-অথচ আর ফেরানো যাবে না।
শেষ লাইনটা শুধু তাদের জন্য, যারা এখনো ফোন দেয়নি
আজ...
"মাকে সময় দাও... টাকায় সব কিছু ফেরানো যায়, কিন্তু মা? মা একবার চলে গেলে শুধু খালি গামলা পড়ে থাকে, আর বুক ভরা কান্না।"
এই গল্প তোমার হৃদয় ছুঁয়ে গেলে, সেটা মায়ের জন্য একবার বলো-
"মা, তুই আমার সবকিছু।"
লেখক:- মোহাম্মদ মামুনুল ইসলাম চৌধুরী
সৌদি আরব প্রবাসী
Comments
Post a Comment