Posts

প্রবাসীর জীবনে বাস্তব কিছু কথা…

Image
 জীবনের তাগিদে, স্বপ্নের টানে, পরিবারের মুখে হাঁসি ফোটাতে… অসংখ্য মানুষ পাড়ি জমায় প্রবাসে। কেউ হয়তো নিজের ইচ্ছায়, কেউবা বাধ্য হয়ে। কিন্তু এই “প্রবাস” শব্দটার ভেতরে যে কতটা কষ্ট, কতটা চাপা কান্না, তা শুধু এক জন প্রবাসীই জানে। প্রবাসের জীবন মানেই– একটা ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা। যখন দেশে ঈদের সকাল শুরু হয় নতুন জামার গন্ধে, তখন একজন প্রবাসী হয়তো কাজে ছুটছে ক্লান্ত শরীরে। পরিবারের হাসিমুখ দেখতে গিয়ে নিজের চোখের কান্না লুকিয়ে রাখে কোনো সাদা দেয়ালের আড়ালে। একটা প্রবাসী কখনোই শুধু টাকাই পাঠায় না, সে পাঠায় তার ঘাম, তার রাত জাগা ক্লান্তি, তার একাকীত্ব আর চাপা যন্ত্রণা। দেশে থাকা মা ফোনে বলে, "ভালো আছো তো বাবা?" সে তখন মুচকি হাসে, কারণ জানে– তার খারাপ থাকার খবরটা মা সহ্য করতে পারবে না। রাতগুলো তার কাছে লম্বা হয়ে যায়। একেকটা রাত যেন একটা যুদ্ধ। কোনোদিন শরীর কাঁপে ক্লান্তিতে, কোনোদিন মন কাঁপে মায়ায়। কেউ কদর করে, কেউ ভুলে যায়, কেউ আবার বলে – “তুই তো বিদেশে আছিস, তোকে আর কী কষ্ট?” প্রবাসে থেকেও মন পড়ে থাকে দেশের আকাশে। মায়ের হাসিতে, বাবার কাশিতে, সন...

প্রবাসীদের মুখের হাসি — লুকানো হাজারো কান্নার গল্প

Image
 বিদেশে পা রাখা মানেই যেন একটা নতুন জীবন শুরু করা। নতুন দেশ, নতুন মানুষ, নতুন ভাষা—সবকিছুই অচেনা। অথচ প্রবাসীদের মুখে সবসময়ই দেখা যায় এক চেনা হাসি। সোশ্যাল মিডিয়ার ছবিতে সেই হাসিটা ঝলমল করে, যেন জীবনের সব সুখ সেখানেই জমা। অথচ কেউ বুঝে না, সেই হাসির আড়ালে লুকিয়ে আছে কত অশ্রু, কত না বলা কষ্ট। রোদের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ, শরীর যখন ভেঙে পড়ে—তখনও ফোনের ওপারে থাকা মায়ের কণ্ঠে হাসি ধরে রাখতে হয়। বলতেই হয়, “ভালো আছি মা, চিন্তা কইরো না।” কারণ মা জানলে কাঁদবে, আর সেই কান্না এক প্রবাসী সন্তানের হৃদয় ভেঙে দেবে। তাই চোখের পানি গিলে মুখে হেসে যেতে হয়। বন্ধু-বান্ধবের বিয়ে, ঈদের খুশি, জন্মদিনের কেক—সব কিছুতেই শুধু অনুপস্থিতি। ভিডিও কলে দেখা হয়, কিন্তু ছোঁয়া যায় না। হাসি দিয়ে সবার সাথে খুশি ভাগাভাগি করতে হয়, আর নিজের ভিতরের শূন্যতাকে চাপা দিতে হয় নিঃশব্দে। প্রবাসীদের হাসিটা যেন একটা মুখোশ—যেটা পরে তারা বাঁচার অভিনয় করে। কারণ এই যুদ্ধটা শুধু টাকার জন্য নয়, ভালোবাসার জন্য, দায়িত্বের জন্য, পরিবারের মুখে সুখের ছোঁয়া আনার জন্য। তাই সবকিছু সয়ে নিয়েও তারা বলে, “ভালো আছি।” মুখে থাকে হাসি, আর মনে জমে থা...

মায়ের কোল থেকে প্রবাস—ভালোবাসার দূরত্ব নয়

Image
 দূরদেশে বসে যখন রাতের আকাশ দেখি, তখন মনে হয়... এই আকাশের নিচেই তো আছেন মা-বাবা। অথচ আমি কত দূরে! একটা ফোনের ওপারে, কিন্তু স্পর্শের বাইরে। গলা শুকিয়ে আসে যখন “মা কী খেয়েছো?” জিজ্ঞেস করি... মা হাসি দিয়ে বলে, “তোর পছন্দের ভর্তা বানাইছিলাম, খাইছিস না থাক, তোর জন্য রাখছি।” কিন্তু জানি, আমি খেতে আসবো না — শুধু মা অপেক্ষা করবে। বাবা হয়তো চুপচাপ থাকেন। ফোনে বেশি কিছু বলেন না। কিন্তু তাঁর কণ্ঠে লুকানো ক্লান্তি আমি শুনতে পাই… যেই বাবা একদিন ছায়া হয়ে পাশে ছিলেন, আজ তাঁকে আমি সাহারা দিতে পারি না। আমি এখানে দিনের পর দিন কাজ করি শুধু এই দু’জন মানুষকে ভালো রাখার আশায়। অথচ মাঝে মাঝে মনে হয়, টাকা পাঠাই ঠিকই… কিন্তু মায়ের কোলে মাথা রাখা বা বাবার সঙ্গে চুপচাপ হাঁটার যে শান্তি, সেটা কোনো রেমিট্যান্সে মেলে না। রাতের খাবার একা খেতে বসলে মনে পড়ে, মা কখনো খালি প্লেটে ভাত তুলে দিতেন না। আর এখন? গ্লাসে পানি পর্যন্ত নিজেই ঢেলে নিতে হয়। বাবা যখন শরীর খারাপের কথা গোপন করেন, তখন বুকের ভেতর হাহাকার করে। কতবার বলেছি, “বাবা, কষ্ট লুকায়ো না…” কিন্তু তিনি শুধু বলেন, “তুই ভালো থাক, আমি ঠিক আছি।” তাদের ভালোবাসা সমুদ্...

একবার যে পুরুষটা বাড়ি ছাড়ে, তার আর ফিরে আসা হয় না...

Image
  পুরুষ মানুষ ক্যারিয়ার গড়ার বাহানায় একবার বাড়ি ছাড়লে, তার আর কখনোই স্থায়ীভাবে বাড়ি ফেরা হয় না..!! ছোটবেলায় যাকে সবাই "আমার ছেলেটা অনেক দূর যাবে" বলে আশীর্বাদ করেছিল—সে সত্যিই অনেক দূরে চলে যায়। দূরত্বটা কেবল কিলোমিটারে মাপা যায় না, মাপা যায় চোখের জল, ফেলে আসা বিকেল, মায়ের ডাকা সেই চেনা নাম ধরে, বাবার ভোরের চা হাতে অপেক্ষায় থাকা মুহূর্তগুলো দিয়ে। প্রবাসী পুরুষটা শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য বাড়ি ছাড়ে না—সে ছাড়ে নিজের আরাম, ভালোবাসা, প্রিয় মুখ, প্রিয় শহর আর নিজের অস্তিত্বের শিকড়। নতুন দেশে, নতুন নিয়মে, নতুন ভাষায়, নতুন সময়ের ঘূর্ণিতে সে নিজেকে খাপ খাওয়াতে গিয়ে নিজেরই অনেকটা হারিয়ে ফেলে। তার জীবনটা সময়ের সাথে একটা হিসেবি যন্ত্রে পরিণত হয়—কত টাকা পাঠালাম, কত মাস ছুটি নেইনি, কত বছর ছেলেমেয়েকে চোখে দেখিনি। মাঝে মাঝে ছবি দেখে কান্না আসে, ভিডিও কলেও গলার কাঁপুনি লুকানো যায় না। তবুও ফিরে যাওয়া হয় না। কেন জানো? কারণ সময় চলে যায়, সম্পর্কের ব্যবধান বাড়ে, নিজের জায়গাটাই পর হয়ে যায়। কেউ বলে—"তুমি তো বাইরেই ভালো", কেউ আর অপেক্ষা করে না সেই রাত্রির বিমানের শব্দ শোনার জন্য। পুরুষ মানু...

"নিঃশব্দ ভালোবাসা" – যেখানে শব্দ নয়, স্পর্শই সমস্ত কথা বলে… 🖤

Image
  তার কাঁধে মাথা রেখে বসে ছিল সে। চারপাশে অনেক মানুষ, আলো-আঁধারির খেলা, অথচ তার চোখে ছিল একটিই দৃশ্য—ওর হাতটা, যেটা হালকা কাঁপছিল… খুব আলতো করে। হাতে সেই পুরোনো ঘড়িটা, যেটা সে দিয়েছিল অনেক বছর আগে, এক জন্মদিনে। দামি কিছু ছিল না, কিন্তু ঘড়ির চারপাশের পাথরের মতো দেখতে নকল হীরা গুলোকে সে বলেছিল—"এইটা সময় নয়, এটা আমার প্রতীক্ষা… তোকে ঘিরে আমার প্রতিটি মুহূর্ত।" সে তখন হেসে বলেছিল, "সময় দিলে ঠিকই পালিয়ে যাবে!" সে বলেছিল, "তুই থাকলে সময় থেমে যাবে।" আজও ঘড়িটা আছে হাতে। সময় অনেক পাল্টেছে, অনেক কিছু বদলে গেছে। তারা এখন পাশাপাশি থাকলেও একসাথে নেই। মুখে কোনো কথা নেই, কাঁধে মাথা রাখাও নেই… কিন্তু মনটা যেন ঠিক আগের মতোই আলতো করে জড়িয়ে আছে। ওর শাড়ির ছাঁট, নখের নরম গোলাপি রং, আর সেই ঘড়িটার টিকটিক শব্দ—সব মিলিয়ে একটা নীরব ভালোবাসা আজও নিঃশব্দে বেঁচে আছে। কারণ প্রেম মানেই কথা নয়, প্রেম মানেই চোখে চোখ নয়… কখনো কখনো, প্রেম মানে শুধু—চুপচাপ পাশে বসে থাকা। আর কেবল অনুভব করা—তুমি আছো… এটাই যথেষ্ট। 🖤✨ লেখক :- মোহাম্মদ মামুনুল ইসলাম চৌধুরী  সৌদি আরব 

মাকে সময় দাও, টাকায় সব ফিরবে না

Image
 ছেলেটা এখন বিদেশে। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে প্রবাসে কাটছে তার জীবন-একাকীত্ব, কঠিন পরিশ্রম আর হাজারো না বলা অভিমানে ঘেরা। তার মা... এখনো সেই পুরনো গ্রামে, মাটির ঘরে। প্রতিদিন বিকেলে উঠোনে বসে থাকেন-চোখ রেখে দেন সেই পথটার দিকে, যে পথ ধরে তার ছেলে একদিন ঢাকা গিয়েছিল, তারপর দেশ ছেড়ে বহু দূরে চলে গিয়েছিল-"ভালো জীবনের" খোঁজে। মা প্রতিদিন দুপুরে রান্না করে ছেলের প্রিয় খাবার। ভাত, আলু ভর্তা আর পান্তা। গামলাটা ছেলের জন্য তুলে রাখেন, মনে করেন, "আজকে না হয় ফোন করবে, বলবে- মা, খাইছি না রে আজ..." কিন্তু ফোন আসে না। ফোন আসে কেবল মাস শেষে, কোনো ATM থেকে টাকা তোলার মেসেজ, বা ছোট ভাইয়ের ফোনে-"ভাইয়া টাকাটা পাঠাইছো?" ছেলেটাও কাঁদে-প্রতিদিন কাজ শেষে, রুমের কোণে বসে মায়ের ছবি দেখে। মনে পড়ে যায়-শৈশবে মা কিভাবে ভিজে গামছা দিয়ে তার গা মুছিয়ে দিতেন, যখন সে খেলতে খেলতে ঘেমে যেত। মনে পড়ে সেই রাতে মা না খেয়ে শুয়েছিলেন, যেদিন ঘরে খাবার ছিল না। আর আজ? আজ মা একা খায়, একা ঘুমায়, একা উঠোন ঝাড়ে, আর রাত নামলে ছেলের খালি গামলাটার পাশে বসে বলে "তুই খেয়ে নিস তো রে বাবা?" এই গল্পটা কোনো এক ছ...

একটা সাদা ফুলের গল্প

Image
  শেষ বিকেলের সেই মুহূর্তটা... শেষ বিকেলের আলোটা ঠিক এমনই হয়, জানো? নরম, ধীরে ধীরে গা ছুঁয়ে যায়। চারপাশে সব কেমন যেন সোনালি হয়ে ওঠে। মেয়েটি বসে ছিল গাড়ির এক কোণায়, কোলে একটা কালো ব্যাগ, আর হাতের আঙুলে ঘুরছিল সাদা একটা ফুলের চাবির রিং। সাদামাটা দেখতে সেই চাবির রিংটায় যেন একটা জাদু লুকানো। বাইরে থেকে কেউ বুঝবে না, কিন্তু মেয়েটির কাছে ওটা ছিল একটা ছোট্ট পৃথিবী। কারণ, ওটাই ছিল তাদের প্রথম ভালোবাসার ছোঁয়া… ছেলেটা একদিন হেসে বলেছিল, "তোমাকে কিছু দেবো, দাম নেই, তবু সারাজীবন সাথে থাকবে।" সেই ছিল এই সাদা ফুল। সেদিন মেয়েটি হেসে বলেছিল, "তুমি ছাড়া কিছুই নেবো না" আর ছেলেটা বলেছিল, "তাই তো দিয়েছি আমাকে—এই ফুলের ছায়ায়।" সময় কেটে গেছে। এখন ছেলেটা নেই পাশে। থাকলেও নেই, আবার না থেকেও অনেক বেশি আছে। প্রতিটি ভোরে, প্রতিটি বিকেলে, মেয়েটির হাতের চাবির রিংটার মতোই কাছাকাছি, অথচ ছুঁয়ে দেখা যায় না। গাড়ির ভেতরে আলো-ছায়ার খেলা, মেয়েটির চোখে পুরনো দিনের ঝাপসা ছবি। কেউ জানে না, কতটা গভীরতা লুকিয়ে আছে ওই একটা ছোট ফুলের পেছনে। ভালোবাসা সবসময় চিৎকার করে জানান দেয় না। অনেকসময় সে চুপচাপ থ...